কমলা ও মাল্টা (সাইট্রাস জাতীয়) গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া এবং নতুন কুঁড়ি (কুশি) না আসা একটা সিরিয়াস সমস্যা—এটা গাছের পুষ্টির ঘাটতি, রোগ বা পরিবেশজনিত কারণে হয়ে থাকে। নিচে বিস্তারিত দিলাম:
🌿 সম্ভাব্য কারণ
1. পুষ্টির ঘাটতি
নাইট্রোজেনের অভাব → পাতা হালকা হলুদ হয়ে যায়, পুরনো পাতা দ্রুত ঝরে পড়ে।
আয়রন ঘাটতি → পাতার শিরা সবুজ থাকে কিন্তু বাকি অংশ হলুদ হয়ে যায় (Chlorosis)।
জিঙ্ক ঘাটতি → ছোট ছোট পাতা হয়, কুশি আসা বন্ধ হয়ে যায়।
2. পানি ও মাটির সমস্যা
অতিরিক্ত পানি জমে গেলে শিকড় পচে যায় → গাছ দুর্বল হয়ে যায়।
খুব শুকনা মাটিতেও গাছ নতুন কুঁড়ি দিতে পারে না।
মাটির pH বেশি (ক্ষারীয় হলে) → গাছ পুষ্টি শোষণ করতে পারে না।
3. রোগ ও পোকামাকড়
রুট রট (Root rot) → শিকড় কালো/পচা হয়ে যায়, গাছ দুর্বল হয়।
সাইট্রাস লিফ মাইনার, এফিড, সাদা মাছি → নতুন কুশি নষ্ট করে দেয়।
সাইট্রাস গ্রিনিং (HLB disease) → পাতা অসমভাবে হলুদ হয়, গাছ ধীরে ধীরে কুঁড়ি দেয় না।
4. পরিবেশগত কারণ
প্রচণ্ড গরম বা ঠান্ডা
যথেষ্ট রোদ না পাওয়া
✅ সমাধান
1. সার ব্যবস্থাপনা
প্রতি গাছে বছরে ৩ বার (ফেব্রুয়ারি, জুন, সেপ্টেম্বর) সার দিন:
ইউরিয়া ২০০–২৫০ গ্রাম
টিএসপি ২০০ গ্রাম
এমওপি ১৫০ গ্রাম
জিঙ্ক সালফেট ২০–২৫ গ্রাম
বোরিক এসিড ১০ গ্রাম
জৈব সার (গোবর/কম্পোস্ট) ৫–৭ কেজি মাটির সাথে মিশিয়ে দিন।
2. পাতায় স্প্রে করুন
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট মিশ্রণ (Zn, B, Fe, Mg) পানির সাথে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর স্প্রে করুন।
আয়রন ঘাটতি থাকলে Ferrous sulfate (FeSO₄) ৫ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন।
3. সেচ ব্যবস্থাপনা
গ্রীষ্মে ৭–১০ দিনে একবার পানি দিন।
বৃষ্টির সময় পানি যেন জমে না থাকে।
4. পোকামাকড় দমন
লিফ মাইনার বা এফিড থাকলে ইমিডাক্লোপ্রিড/অ্যাকটারা জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করুন।
জৈব পদ্ধতিতে নিম তেল স্প্রে করতে পারেন।
5. রোগ দমন
শিকড় পচা হলে মাটিতে ট্রাইকোডার্মা বা বাভিস্টিন মিশিয়ে দিন।
যদি Citrus greening রোগ হয় → আক্রান্ত ডাল কেটে ফেলতে হবে, পুরো গাছ আক্রান্ত হলে গাছ তুলে ফেলতে হবে।
👉 সারসংক্ষেপ:
আপনার কমলা ও মাল্টা গাছের হলুদ হওয়ার প্রধান কারণ সম্ভবত পুষ্টি ঘাটতি + মাটির সমস্যা। নিয়মিত সার, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট স্প্রে ও সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা করলে নতুন কুঁড়ি আসবে।